লিভারে রোগ বুঝবেন জিহ্বা দেখে
আমাদের দেশে লিভারের রুগী অনেক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভাইরাস সংক্রমণের
কারণে লিভারের রোগ হয়ে থাকে। অ্যালকোহল সেবন, ভেজাল খাবার, লিপিড এবং কার্বোহাইড্রেট
এর বিপাকক্রিয়ায় অচলাবস্থার কারণেও লিভারের রোগ দেখা দিতে পারে। লিভারের রোগের কারণে
অনেক সময়ই মুখে প্রচন্ড দুর্গন্ধ হয়ে বিড়ম্বনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ডায়াবেটিস ও
হৃদরোগের মত লিভারের রোগের সাথে পেরিওডণ্টাল রোগের যোগসূত্র রয়েছে। পেরিওডণ্টাইটিস
এর সাথে লিভারের রোগ যেমন নন অ্যালকোহলিক লিভার ডিজিজ, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমার যোগসূত্র খুজে পাওয়া
যায়। অর্থাৎ লিভারে সমস্যা থাকলে
এ সব রোগের অবস্থার অবনতি ঘটে থাকে। তাই লিভারের রোগের চিকিৎসার পাশাপাশি আপনার পেরিওডণ্টাল স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে
হবে। এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে হবে।
জিহবা সাদা, ফাটা, হলুদ বর্ন হওয়া, এগুলা আপনার
ফ্যাটি লিভার ও হেপাটোমেগালী বা এনলার্জ ( লিভার বড় হওয়া), একটুতেই দাতের রক্তপাত
হওয়া লিভারের চিহ্ন বহন করে। দাঁতের রক্তপাত হওয়ার একটি
উল্লেখযোগ্য কারণ লিভারের রোগ। লিভার ফেইলিউর বা লিভার অকার্যকারিতায় যে সব কারণে রক্ত
জমাট বাধতে পারে না সেগুলো হলো-
(ক) ভিটামিন কে’র বিপাকক্রিয়ায় প্রতিবন্ধকতা
(খ) ফিব্রিনোলাইসিসের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া
(গ) স্বাভাবিক রক্ত জমাট প্রক্রিয়ার উপাদানগুলোর বেশী পরিমাণে
শরীর দ্বারা গ্রহণ করা।
উপরোক্ত কারণে রক্তপাত রোধ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এন্টিফিব্রিনোলাইটিক এজেন্ট এবং ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা প্রয়োগ মাঝে মাঝে কার্যকর হয়ে থাকে। আর এর সঙ্গে ভিটামিন কে’ও ভূমিকা রাখতে পারে। ক্রনিক লিভারের রোগে সামান্য আঘাতে মাড়ি থেকে অতিরিক্ত রক্তপাত হতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ক্রনিক লিভার ডিজিজে দাঁত ও মাড়িতে সবুজ দাগ এবং এনামেল হাইপোপ্লাসিয়া দেখা যেতে পারে।
হেপাটাইটিস ‘সি’ ভাইরাস সংক্রমিত মানুষের সংখ্যা একেবারে কম নয়। সংক্রমিত ব্যক্তির রক্ত বা রক্তজাত দ্রব্যের মাধ্যমে এ ভাইরাস সংক্রমণ ঘটে থাকে। যৌন মিলনেও হেপাটাইটিস সি ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। বর্তমানে হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ইনজেকশনের সিরিঞ্জ দিয়ে ড্রাগ নেওয়ার মাধ্যমে বেশি সংক্রমিত হচ্ছে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস লিভারের মারাত্মক ক্ষতি, লিভার ফেইলিউর, লিভার ক্যান্সার এবং এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে। এছাড়া ধারণা করা হয় হেপাটাইটিস সি ভাইরাসের সাথে মুখের অভ্যন্তরের রোগ লাইকেন প্ল্যানাস এবং স্কোয়ামাস সেল কারসিনোমা বা ক্যান্সার এর যোগসূত্র থাকতে পারে। নিরাপদ রক্ত গ্রহণ ও নিরাপদ যৌন মিলনই এটা প্রতিরোধ করতে পারে। হেপাটাইটিস সি ভাইরাস ক্রনিক হেপাটাইটিস, লিভার সিরোসিস এবং হেপাটোসেলুলার কারসিনোমা সৃষ্টি করতে পারে।অন্যদিকে আপনার শরীরে বি ভাইরাস উপস্থিত থাকলে কেবলমাত্র তখনই আপনি ডি ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারেন। তাই যথা সময়ে বি ভাইরাসের চিকিৎসা নিন। মনে রাখতে হবে কেবলমাত্র হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস হেপাটোসেলুলার ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। তাই এসব বিষয়ে সমাজের সবাইকে সচেতন হতে হবে।
ফাঁটা জিহ্বা/Cracked tongue |