মঙ্গলবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৯

ইউরিক এসিড

 ইউরিক এসিড আমাদের শরীরে দুই ধরনের এমাইনো এসিডের প্রয়োজন পড়ে। একটি আবশ্যক (এসেনশিয়াল) এমাইনো এসিড। আরেকটি অনাবশ্যক (নন এসেনসিয়াল) এমাইনো এসিড। এই নন এসেনসিয়াল এমাইনো এসিডের মধ্যে একটি হলো পিউরিন। এই পিউরিন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শরীরের প্রতিটি কোষে পাওয়া যায়। কারণ শরীরে পিউরিন তৈরি হয়।
এ ছাড়া কিছু কিছু খাবার থেকেও আমরা পিউরিন নামক এমাইনো এসিড পেয়ে থাকি। কোষে থাকা এই পিউরিনের ভাঙনের ফলে যে উপাদান তৈরি হয় একেই ইউরিক এসিড বলে। এই ইউরিক এসিড রক্তে চলে যায়। নারীর ক্ষেত্রে রক্তে ইউরিক এসিডের স্বাভাবিক মাত্রা হলো ২ দশমিক ৪ থেকে ৬ দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল এবং পুরুষের ক্ষেত্রে ৩ দশমিক ৪ থেকে ৭ দশমিক ০ মিলিগ্রাম পার ডিএল।

কোন কোন খাবার থেকে ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়?যদি দেহে অতিমাত্রায় পিউরিনযুক্ত প্রানীজ প্রোটিন এর বিশ্লেষণ বেশি হয় এবং বিশেষ করে লাল মাংস যেমনঃ গরু, খাসী, ষাড় এর মাংস, মাছের ডিম, কলিজা ইত্যাদি যদি বেশী খাওয়া হয় তবে ইউরিক এসিড বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় অনেক বেশী হয়। এছাড়াও পিউরিন সমৃদ্ধ শাক-সবজি ও বীচি জাতীয় খাবার যেমনঃ বিভিন্ন ডাল, বীচি, মাশরুম, পালং শাক, সীম, বরবটি, ফলের মধ্যে আম, কলা, সফেদা, খেজুর, কিসমিস, আখ, তাল ইত্যাদি।

 মাত্রাতিরিক্ত ইউরিক এসিড আমাদের দেহে কি কি ক্ষতি করে?
ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে দেহের অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন অংগ বিশেষ করে কিডনির উপরে দীর্ঘদিন জমলে রেনাল স্টোন হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। ফলে কিডনি ঠিক মত কাজ করে না এবং মুত্রের মাধ্যমে ইউরিক এসিড ও অন্যান্য বর্জ্য শরীর থেকে বের হতে পারে না। কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং কিডনি ড্যামেজ ও হয়। এছাড়াও বাড়তি ইউরিক এসিড শরীরের হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ক্রিস্টাল এর মত হয়ে জমে যায়, যাতে করে অনেক রোগীর হাড়ের সন্ধিস্থলে ফুলে যায় এবং খুব ব্যাথা হয়। এই রোগের নামই গাউট বা গেটে বাত। সোডিয়াম এর মাত্রা নিয়ন্ত্রনে এর ভুমিকা থাকায় হাইপ্রেশার বা উচ্চ রক্তচাপ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এছাড়াও অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতাসহ হার্ট ডিজিজ এর সম্ভাবনা ও বেড়ে যায়।

কি কি খাবার খেলে ইউরিক এসিড কমে যায়?
১। বাদাম
বিশেষ ধরনের, মানে ব্রাজিলে উৎপাদিত বাদাম, আমন্ড, ম্যাকাডেমিয়া বাদাম ও আখরোটে সাধারণত পিউরিনের পরিমাণ কম থাকে, যা ইউরিক এসিডের মাত্রাকে স্বাভাবিক পর্যায়ে নামিয়ে আনতে সাহায্য করবে। ব্রাজিলে উৎপাদিত বাদামে পিউরিনের পরিমাণ মাত্র ৪০ মিলিগ্রাম। তবে রাস্তায় আমরা সচরাচর যে বাদামগুলো দেখতে পাই, ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে সেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত। কারণ, প্রতি কাপে সেগুলোতে পিউরিনের পরিমাণ ৮০ মিলিগ্রাম।
২।লেবুর শরবত
ইউরিক এসিড প্রতিরোধে সাইট্রিক এসিড (কমলালেবু বা লেবুতে থাকা একধরনের বিশেষ এসিড) সেরা একটি হাতিয়ার। লেবুতে রয়েছে ভিটামিন-সি এবং সাইট্রিক এসিড। ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণে একটি লেবুর রস এক গ্লাস গরম পানিতে দিয়ে প্রতিদিন দুবার অথবা তিনবার পান করা উচিত।
৩।অলিভ অয়েল
শরীরে ইউরিক এসিডের পরিমাণ স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসতে অলিভ অয়েলের জুড়ি নেই। অলিভ অয়েলে রয়েছে প্রদাহরোধী ক্ষমতা। তাই ইউরিক এসিডের প্রদাহ থেকে বাঁচতে সবজি, সালাদ ও পাস্তাতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

আপনার সচেতনতা সুস্থ থাকার প্রধান উপায়, আর মনে রাখবেন সুস্থ শরীরে পথ্য মেনে চললে সাধারণত অসুস্থতা কম আসে।
হোমিওপ্যাথিতে ইউরিক এসিড জনিত চিকিৎসা খুব সফলভাবে করা যায়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

Ipecac